গ্যাস সঙ্কটে অনেক স্টেশন বন্ধ

গাবতলী টেকনিকাল মোড়ের যমুনা সিএনজির সামনে দড়ি দিয়ে ভেতরে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ গতকাল বুধবার দুপুরে যমুনার মেশিন অপারেটর সেলিম বললেন, সকাল থেকে বেকার হয়ে আছি৷ গ্যাসের প্রেশার নেই৷ আগে যেখানে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা বিক্রি করতাম, এখন ৩০ হাজার টাকার গ্যাসও বিক্রি করা যাচ্ছে না৷
যমুনা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ডেনসো, পূর্বাচল ফিলিং স্টেশনও সকাল থেকে বন্ধ ছিল৷ গাবতলী থেকে টেকনিকাল মোড় পর্যন্ত অনেক ফিলিং স্টেশনের মধ্যে মাত্র দুটি নাভানা সিএনজি ও টিসি সিএনজি চালু রয়েছে৷ এসব স্টেশনে গ্যাসের চাপ খুব কম৷ একই অবস্থা মিরপুর ২ নাম্বারের কিংশুক সিএনজি স্টেশনসহ রোকেয়া সরণির সাত-আটটি স্টেশনে৷ নগরীর অন্য এলাকাগুলোতেও কমবেশি অভিন্ন অবস্থা চলছে৷ মিরপুরের একাধিক ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তা ও বিক্রয় কর্মী জানান, আগে স্বাভাবিক সময়ে সর্বোচ্চ ২২ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে) চাপে গ্যাস পেলেও গতকাল সকালে সেটা ৮ পিএসআইয়ে নেমে আসে৷ ফলে অনেক সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়৷ শীতের কারণে সরু পাইপলাইনে গ্যাসের প্রেশার কমে যাচ্ছে বলে জানালেন স্টেশনের কর্মীরা৷ এছাড়া অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে গ্যাস সঙ্কট চলছে৷ তেজগাও, মগবাজার এলাকায় গতকাল কয়েক দফা লোডশেডিং করা হয়৷
নগরীর ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নীলক্ষেত, মগবাজার, সাতরাস্তা, তেজগাওয়ে সিএনজি স্টেশনগুলোতেও সিএনজিচালিত গাড়ির প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে৷ সাতরাস্তায় আকিজ সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের লাইনে অপেক্ষমাণ ক্যাবচালক এয়াকুব আলী বললেন, পৌনে এক ঘণ্টা ধরে লাইনে আছি৷ এখনো গ্যাস পেতে আরো ঘণ্টাখানেক লাগবে৷ তেজগাওয়ের সুপার সিএনজিসহ মহাখালীর বেশ কয়েকটি স্টেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গ্যাস সঙ্কটের কারণে তারা এখন রেশনিং করে যার ৫০ ঘনমিটার গ্যাস দরকার তাকে ১৫/২০ ঘনমিটার দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন৷ কোনো কোনো স্টেশন খোলা রাখতে হচ্ছে সারা রাত৷
গ্যাস সঙ্কটের কারণে কোনো কোনো স্টেশন ঘিরে আধা কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ লাইনও দেখা গেছে৷ গাড়ির চাপে অনেক রাস্তায় যানজট লেগে থাকছে সারা দিন৷ মগবাজার মোড়ের দক্ষিণ পাশে অনুদীপ সিএনজি এবং উত্তর পাশে যমুনা অটো সিএনজিতে গাড়ির ভিড়ের কারণে পুরো এলাকায় যানজট লেগে থাকে৷
গত বছরের আগস্টে তীব্র গ্যাস সঙ্কটের পর সম্প্রতি শীত এবং লোডশেডিংয়ের কারণে আবার গ্যাস সঙ্কট দেখা দেয়৷ গত পাচ মাসে আরো প্রায় ২০ হাজার সিএনজিচালিত গাড়ি রাস্তায় নেমেছে৷ কিন্তু ঢাকায় ফিলিং স্টেশন ১১টি বেড়ে এখন দাড়িয়েছে ৯১টিতে৷ ঢাকার প্রায় ৫৫ হাজার সিএনজিচালিত গাড়িতে গ্যাস সরবরাহে স্বাভাবিক সময়েই স্টেশনগুলো হিমশিম খায়৷ স্টেশনপ্রতি গড়ে ছয় শতাধিক গাড়ির লাইন এখন সঙ্কটের কারণে চাহিদাকে তীব্র করে তুলেছে৷
একাধিক ফিলিং স্টেশন কর্মকর্তা জানান, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করে বলেছে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে গ্যাস সমস্যার সমাধান হবে৷ উল্লেখ্য, ঢাকা ক্লিন ফিউয়েল প্রকল্পের আওতায় ঢাকার চারপাশে ১০০ কিলোমিটার বৃত্তাকার গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও সেটা চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হচ্ছে না৷ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৬ ইঞ্চি ডায়ামিটারের এই গ্যাস পাইপলাইন থেকে ঢাকায় একযোগে ৫০০ সিএনজি স্টেশনকে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে৷
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কম্পানির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, গাড়ি রূপান্তরের তুলনায় নতুন ফিলিং স্টেশন তেমন হচ্ছে না৷ সিএনজি স্টেশন করার জন্য যারা সরকারি জমি বরাদ্দ পেয়েছিলেন তারাও এগিয়ে আসছেন না৷
সূত্রঃ http://www.jaijaidin.com/view_news.php?News-ID=26371&issue=196&nav_id=7

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান