এলডিপির নির্বাহী সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, এলডিপি গঠনের সময় বিএনপির ৫০ জন মন্ত্রী-এমপি তার সঙ্গে ছিলেন। কিন্ত পরিস্থিতির কারণে তখন তারা আসতে পারেননি। এখন তারা আবার এলডিপিতে আসার জন্য যোগাযোগ করছেন। তিনি বলেন, দু’বছর আগেই বিএনপিকে বলেছিলেন আল্লাহর গজব পড়বে। কারণ তারা মানুষের হক নষ্ট করেছে।
বুধবার বিকালে বিএনপির দুই সাবেক সাংসদ মেহেরপুর-২ আসনের মোঃ আবদুল গনি ও জয়পুরহাট-২ আসনের আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমানের এলডিপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কর্নেল অলি বলেন, ২০০২ সালেই বেগম জিয়াকে বলেছিলেন, মায়ের ভূমিকা বাদ দিয়ে লৌহমানবের ভূমিকা পালন করুন। এরপর ২০০৩ সালে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছিলেন। তখন অনেকে বলেছিলেন, মন্ত্রিত্ব না পেয়ে তিনি এসব কথা বলছেন। কিন’ এখন কর্নেল অলির কথাই প্রমাণিত হচ্ছে।
মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কাার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যোগদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ রাজ্জাক আলী, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, রেদোয়ান আহমেদ, এমএ জিন্নাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় এলডিপির সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও সংগঠনের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন। এলডিপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহী বি. চৌধুরী, এলডিপি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ, হাজী নাসির উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কর্নেল অলি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। না হয় তাদের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। একইভাবে তিনি যৌথ বাহিনীর প্রতিও অনুরোধ জানান, ছোটখাটো জিনিস নিয়ে যেন মানুষকে আতংকিত করা না হয়। মানুষ যেন নিরাপদ বোধ করে সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ত্রাণের টিনে এমপিরা সুপারিশ করেন মাত্র, কিন’ অনুমোদন করেন সরকারের ডিসি। তাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে একজন এমপি ত্রাণের টিন মসজিদ, মন্দির গির্জা, ক্লাব, পাঠাগারে দিতেই পারেন। এটাই তাদের কাজ। কিন’ টিনের ঘটনায় অনেক জনপ্রতিনিধিকে হেয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ময়না, ময়ূর, চড়-ই পাখি আর বন্যপ্রাণী নিয়েও অনেক জনপ্রতিনিধিকে নাজেহাল করা হচ্ছে। এর কোন অর্থ হয় না। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে কি কাঁটাবন রোডের বণ্যপ্রাণী বিক্রেতা ও বানরওয়ালাকেও জেলে দেবেন? তিনি মনে করেন, এসব ছোটখাটো বিষয়ে মাথা ঘামাতে গেলে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করার ঘটনা ঢাকা পড়ে যাবে।
শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের ফাঁসির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কর্নেল অলি বলেন, তাদের কে সন্ত্রাসী বানাল সে তথ্য দেশবাসীকে জানান। আগে শুনেছেন শায়খ রহমান, বাংলা ভাইয়ের পেছনে ছিল অমুক মন্ত্রী, অমুক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। এসব তো শোনা কথা। এখন শায়খ রহমান, বাংলা ভাই নিজের ভাষায় বলুক, কে তাদের অর্থ জোগান দিয়েছে।
কর্নেল অলি কয়েকটি পত্রিকায় তার দুই সন-ানকে জড়িয়ে লেখা সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, একটি মহল তার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য তার দুই পুত্রের বিরুদ্ধে জমি জবরদখলের মিথ্যা খবর লিখেছে। তিনি কাগজপত্র দেখিয়ে বলেন, তার সন-ানরা জোর করে কারও জমি জবরদখল করেনি। কর্নেল অলি দলীয় নেতাকর্মীদের মিথ্যাশ্রয়ী কিংবা কোন গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোন কথা শুনলেই তা যেন যাচাই করে নেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ষড়যন্ত্রকারী ও কুচক্রীরা এলডিপিতে টিকে থাকতে পারবে না।
শেখ রাজ্জাক আলী বলেন, এলডিপিই একমাত্র সম্ভাবনাময় দল, যে দলকে মানুষ অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। তিনি আশা করেন, অচিরেই এলডিপি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে।
এলডিপিতে যোগদানকারী সাবেক বিএনপি সাংসদ আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, ঘুণে ধরা রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে তিনি উদার ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক দল এলডিপিতে যোগ দিয়েছেন। সাবেক ও নব্য দুর্নীতিবাজদের আখড়া বিএনপি এখন একটি পরিত্যক্ত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। বিবেকের তাড়নায় তিনি বিএনপি থেকে বেরিয়ে এসেছেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, তিনবার তিনি এমপি হয়েছেন। কিন’ যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ায় তিনি মর্মাহত হন। কিছু দুর্নীতিপরায়ণ নেতা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেন। কিন’ এদেরই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে দুর্নীতিকে জায়েজ করা হয়।
বিএনপিদলীয় সাংসদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় সংসদে সংসদীয় দলের কোন সভা না করে সংসদকে অথর্ব করে রাখা হয়। দলের কাউন্সিল এমনকি কার্যনির্বাহী কমিটির কোন সভা না করে দলকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়। কোন শিক্ষিত ও সৎ ব্যক্তির পক্ষে বিএনপিতে থাকা সম্ভব নয়। তাই তিনি দলের প্রাথমিকসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক বিএনপিদলীয় সাংসদ আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, শহীদ জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচি ও তার সহজ-সরল জীবনযাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে তিনি ১৯৭৮ সালে বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন। জিয়ার শাহাদতের পর বেগম জিয়া দলের দায়িত্বভার নিলে তাকে জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। নানা আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এর ফলশ্রুতিতে তিনি চার-চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন’ ২০০১ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর কিছু উচ্চাভিলাষী ও নব্য নেতার আবির্ভাব ঘটে এবং তারা ব্যাপক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এতে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। আবু ইউসুফ বলেন, দূর থেকে নেতাদের অপকর্ম লক্ষ্য করলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। দলে থেকে তিনি লক্ষ্য করেছেন, বিগত সময়ে ত্যাগী, সৎ ও জ্যেষ্ঠ নেতারা চরমভাবে অবহেলিত ও অপমানিত হয়েছেন। সেই দলে থেকে তিনি বিএনপি নেতা হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের দুর্নীতির দায় বহন করতে রাজি নন। তাই তিনি দলের প্রাথমিক পদসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। Source:দৈনিক যুগান্তর
Date:2007-03-08
এলডিপিতে গেলেন বিএনপির সাবেক দুই সাংসদ – আগেই বলেছিলাম আল্লাহর গজব পড়বে : কর্নেল অলি
Advertisements