ঢাকার সাভার ও গাজীপুরের কয়েকটি পোল্ট্রি খামারে প্রাণঘাতী ব্যাধি বার্ড ফ্লুর জীবাণু সনাক্ত হওয়ার পর সরকার বার্ড ফ্লু রোধে ব্যাপক সতর্কতামূলক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সাভার ও গাজীপুরের আক্রান্ত খামারের মুরগি নিধনসহ খামার এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত কোন পোল্ট্রি খামারের হাঁস-মুরগি ও ডিম যাতে বাজারজাত করতে না পারে তত্ত্বাবধানের জন্য সরকার সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য ও উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) মতিউর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, বার্ড ফ্লু রোধে সরকার সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একইভাবে বার্ড ফ্লু প্রবণ এলাকায় মুরগি নিধনেও সেনাবাহিনী সহায়তা করবে। এদিকে কৃষি ও পশু সম্পদ উপদেষ্টা ডঃ সি এস করিম সাংবাদিকদের জানান, সাভার ও গাজীপুরের বিভিন্ন বার্ড ফ্লু আক্রান্ত খামারের ৩৬ হাজার মুরগি নিধন করা হয়েছে এবং সরকার খামারিদের ক্ষতিপূরণ আশ্বাস দিয়েছে। এদিকে, ঢাকার সাভার ও গাজীপুরে বার্ড ফ্লু সনাক্ত হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পোল্ট্রি শিল্প মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে। সাধারণ মানুষ মুরগি ও ডিম খেতে অনেকাংশে ভয় পাচ্ছে। তবে দেশের বিশেষজ্ঞগণের মতে দেশের অন্য কোথাও পোল্ট্রি খামারে বার্ড ফ্লু সনাক্ত হয়নি। এছাড়া মুরগির মাংস ও ডিম ভাল করে রান্না করা হলে আক্রান্ত পোল্ট্রি থেকে ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয় না। সিঙ্গাপুর সরকারের তথ্য, যোগাযোগ ও আর্টস মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সচেতনতামূলক নিবন্ধে বলা হয়, ডিম ও মুরগির মাংস ভাল করে রন্ধন করা হলে বার্ড ফ্লুর ভাইরাস এইচ ৫ এন ১ উচ্চ তাপে মারা যায়। ফলে ভয়ের কোন কারণ নেই।
এদিকে, উদ্বিগ্ন মানুষকে সচেতন করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিলেও দেশের বিপুল সংখ্যক পোল্ট্রি খামার এখনও যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতার বাইরে রয়েছে। বর্তমানে দেশে রেজিস্টার্ড পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা ৫২ হাজার। এ ছাড়া নিবন্ধন ছাড়া পোল্ট্রি খামার রয়েছে দেড় লক্ষাধিক। দেশকে বার্ড ফ্লুর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের সৃষ্ট আতংক রোধে দেশব্যাপী বার্ড ফ্লুর বিরুদ্ধে এখনই ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া প্রয়োজন। একইভাবে মানুষের মধ্যে এই প্রাণঘাতি ব্যাধি সংক্রমিত হলে চিকিৎসা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থার জন্যও প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরী। এমন অভিমত বিভিন্ন সূত্রের।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশে হিউম্যান ফ্লু সনাক্ত হয়নি। বাংলাদেশ বার্ড ফ্লুর ভয়াবহতা প্রতিরোধে পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নেয় বলে জানান হয়। এদিকে স্বাস্থ্য ও পশুসম্পদ উপদেষ্টা উভয়েই বার্ড ফ্লু নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পোল্ট্রি খামারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নতুন করে বার্ড ফ্লুর কোন জীবাণু সনাক্ত হয়নি। এদিকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, সাভারে বিমানের পোল্ট্রি খামারে বার্ড ফ্লুর জীবাণুর সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও কেন বিলম্বে খবরটি মিডিয়াতে দেয়া হলো। এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপ নেয়ার খবর আসছে।
সাভার সংবাদদাতা জানান, সাভারে বিমান পোল্ট্রি ফার্মে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা অর্থাৎ বার্ড ফ্লু ভাইরাস সনাক্ত হবার পর বিমান পোল্ট্রি ফার্মের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত সাভার ও গাজীপুরের ৫টি ফার্মের প্রায় ১৫ হাজার মুরগি নিধনের ঘটনার পর গতকাল শনিবার পশুসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিমান পোল্ট্রিতে বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত ৩০ হাজার মুরগি নিধনের ঘটনার পর শুক্রবার সাভারের ৩টি ও গাজীপুরের ২টি ফার্মের প্রায় ১৫ হাজার মুরগি নিধন করা হয়।
এদিকে সাভারে প্রায় এক হাজার খামারের মালিকরা বার্ড ফ্লু ভাইরাসটি যাতে না ছড়াতে পারে সেজন্য নিজ নিজ খামারে বায়ো সিকিউরিটি জোরদার করেছে। খামারের চৌহদ্দির ভিতর কোন পশু-পাখি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। বহিরাগতদের খামারের ভিতরে প্রবেশের ব্যাপারেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হাইজেনিক কন্ডিশনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ভাইরাস প্রতিরোধে ডিজইন-ফেকশনাল উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি ১২ সপ্তাহের ওপর বয়সী মুরগি নিধনকালে ৮০ টাকা এবং ১২ সপ্তাহের নিচে হলে প্রতি মুরগির জন্য ১৫ টাকা প্রদানের কথা রয়েছে।
টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় মুরগি নিধনের জন্য পশু অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ওই এলাকায় যাননি। তবে বিমান পোল্ট্রি ফার্মের ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থিত ফার্ম ও গৃহস্থদের মুরগি কেউ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন ও জবাই করতে পারবে না বলে জানান হয়।
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, সদর উপজেলার জিরানী বাজার এলাকায় অবস্থিত বিবি আয়েশা (রাঃ) পোল্ট্রি ফার্মে বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত ৩২৬৪টি মুরগীসহ ৩০ হাজার ৭২০টি হ্যাচিং ডিম নিধন ও বিনষ্ট করা হয়েছে।
আজ রবিবার থেকে বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত ফার্মের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য মুরগী ফার্মের ও পারিবারিকভাবে লালনপালনকৃত মুরগী হাঁস নিধনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ৩ কিলোমিটার এলাকার ভেতর অন্যান্য ফার্মের মুরগীর উপর জরিপ চালানো হবে। বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত মুরগীর ফার্মে কর্মরত-কর্মচারীদের বার্ড ফ্লুর প্রতিরোধক ক্যাপসুল ও জি ফ্লু খাওয়ানো শুরু হয়েছে। তবে জেলা পশু সম্পদ অফিস থেকে বার্ড ফ্লু ব্যাপারে আতংকিত না হবার জন্য বলা হয়েছে।
বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত মুরগীর ফার্মের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য মুরগীরও পারিবারিকভাবে লালনকৃত মুরগী ও হাঁসনিধন করা হবে বলে জেলা পশু সম্পদ অফিস থেকে জানা গেছে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে ৩ কিলোমিটার এবং ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য ফার্মের মুরগীর ব্যাপারে জরিপ চালানো হবে।
নারায়ণগঞ্জে একটি খামারে ৭ হাজার মুরগির মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা ।। বন্দরে একটি পোল্টি ফার্মে ‘ফাউল কলেরা’ রোগে ৭ হাজার মুরগীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সোনাকান্দা ডকইয়ার্ড সংলগ্ন কালুন মিয়ার মালিকানাধীন পোল্ট্রি ফার্মে মুরগীর মরক শুরু হলে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ৭ হাজার মুরগীর মৃত্যু হয়।
জেলা পশু কর্মকর্তা আবু তাহের জানান, মৃত মুরগিগুলি বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত নয় প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদেশে সাধারণতঃ গাম্বুরা ও রানীক্ষেতে পোল্ট্রি মুরগীর মড়ক লেগে থাকে। তিনি আরো বলেন, বার্ড ফ্লুর মত ফাউল কলেরা রোগও এত ব্যাপক নয়। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মৃত মুরগীগুলী মাটি চাপা দিয়ে দেয়া হয়েছে। Source:দৈনিক ইত্তেফাক
Date:2007-03-25