মেয়র সাদেক হোসেন খোকার দাবি ট্যাক্স বাড়িয়ে ঢাকাকে ব্যাংকক সিঙ্গাপুরের মতো করা সম্ভব

ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর আয়তন বৃদ্ধির কথা বিবেচনায় রেখে ৫০ বছরের মাস্টারপস্ন্যান নিয়ে কাজ শুরম্ন করা প্রয়োজন। পরিচ্ছন্নতা খাতে নগরবাসীর কাছ থেকে প্রাপ্ত ট্যাক্স বৃদ্ধি করা গেলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকা শহরকে ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুরের মতো অত্যাধুনিক শহরে পরিণত করা কঠিন কাজ নয়। তিনি বলেন, কোনো সরকারি পদে এটাই তার শেষ দায়িত্ব পালন। তবে পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যনত্দ বিধি অনুযায়ী তিনি বর্তমান দায়িত্ব পালন করবেন।

গতকাল মেয়র হিসেবে পাচ বছরের মেয়াদকাল পূরণ উপলৰে ঢাকা সিটি কর্পরেশন অডিটরিয়ামে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সাদেক হোসেন এ কথা বলেন। তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার সাফল্য ও ব্যর্থতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি তার কাজের লম্বা ফিরিসত্দি দেন। ডিসিসির সীমাবদ্ধতার চিত্রও তুলে ধরেন। তিনি ৰোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ফাইল চেয়ে পাওয়া যায় না। অনেক গুরম্নত্বপূর্ণ ফাইল পেতে সমস্যা হয়। সিটি কর্পরেশনের নিজস্ব পুলিশ ফোর্স থাকার ওপর তিনি জোর দেন।

রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে আপত্তি জানিয়ে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যকার মতবিরোধই দায়ী। আর এ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে অন্য একটি শক্তি ৰমতা দখলের চেষ্টা করছে। তবে এ উক্তির মাধ্যমে তিনি কোনো রাজনৈতিক ঐক্যের ইঙ্গিত দিলেন কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নটি মেয়র কৌশলে এড়িয়ে যান।

সাংবাদিকদের পৰ থেকে তার বিরম্নদ্ধে আনা বিভিন্ন প্রজেক্টের অনুমতি প্রদানে কমিশন গ্রহণসহ বিভিন্ন অভিযোগ নাকচ করে মেয়র বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকে ডিসিসিতে ২০০ কোটি টাকা লোপাট শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকৃতপৰে প্রজেক্টটি ছিল মাত্র ২২ কোটি টাকার। কিন্তু তারপরও এ রকম কোনো অভিযোগ পেলে আমরা তদনত্দ কমিটি গঠন করি এবং তদনত্দের রিপোর্ট অনুযায়ী দোষী কর্মকর্তাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।

তিনি বলেন, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়ে ২০০২ সালের ১৫ মে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের সময় ঢাকা সিটি কর্পরেশনের ৬৩১ কোটি টাকা ঋণ ছিল। এ জন্য উন্নয়ন কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রসত্দ হয়েছে। তা সত্ত্বেও ডিসিসির উন্নয়ন কর্মকা- সনত্দোষজনক ছিল_ এমন মনত্দব্য করে তিনি বলেন, নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শহরে কবরস্থানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এ ব্যাপারে চারটি কবরস্থানের আবেদন করা হলেও দুটির অনুমোদন পাওয়া গেছে, যা দিয়ে আগামী ২৫ বছর কবর দেয়া নিয়ে সঙ্কট হবে না। এছাড়া সীমিত জনবল সত্ত্বেও ঢাকা শহরকে সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগে আবর্জনা ফেলার জন্য কর্পরেশনের একটিমাত্র ডাম্পিং পয়েন্ট ছিল। এতে শহরের এক প্রানত্দ থেকে অন্য প্রানত্দে আবর্জনা সরাতে অধিক জ্বালানি খরচ এবং প্রচুর সময় অপচয় হতো। সমস্যা সমাধানে আরো চারটি ডাম্পিং পয়েন্ট চালুর প্রসত্দাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সাভারের আমিনবাজারে অবস্থিত ডাম্পিং পয়েন্টটি ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে।

দায়িত্বরত অবস্থায় জনজীবনের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে ফুট ওভারবৃজ ভেঙে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ঝুকিপূর্ণ সব ফুট ওভারবৃজ মেরামতের পাশাপাশি ১৬টি নতুন ফুট ওভারবৃজ নির্মাণ করা হয়েছে। যানজট নিরসনে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্থান ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পসহ বেশকয়েকটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসীর স্বসত্দি ফেরাতে ডিসিসি বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে আমরা যথেষ্ট সফলতা পেয়েছি।

ডিসিসির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ মহানগরীতে ১ কোটি ২০ লাখ লোক বাস করে। তাদের সেবা দেয়ার জন্য ডিসিসির রয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৫০০ কর্মী। এর মধ্যে সাত হাজারই কাজ করে পরিচ্ছন্ন বিভাগে। প্রয়োজনের তুলনায় এ জনবল অপ্রতুল। তাছাড়া আবর্জনা পরিষ্কারে বিভাগের কমপৰে ৭০০টি গাড়ি প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ২০০টি। তিনি বলেন, আবর্জনা পরিষ্কারে প্রতিবছর ৬০ কোটি টাকা খরচ হলেও নগরবাসীর কাছ থেকে আদায় করা কর থেকে আসে মাত্র ২০ কোটি টাকা। চাহিদা পূরণে অন্যান্য খাত থেকে বাকি ৪০ কোটি টাকা আনা হয়। ফলে এ কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে গিয়ে অন্যান্য খাতের কাজগুলো অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। এ সময় বর্তমান ঢাকা শহরের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ৫০ বছর পর এ শহরের সম্ভাব্য অবস্থা সম্পর্কে চিনত্দা শুরম্ন করা উচিত বলে মনত্দব্য করেন মেয়র। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আগামী ৫০ বছরের কথা মাথায় রেখে আমাদের একটা মাস্টারপস্ন্যান তৈরি করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বর্তমান কেয়ারটেকার সরকারের কাছে তিনটি চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান। এর মধ্যে শহরের চারপাশে অবস্থিত নদীগুলো প্রশসত্দকরণ, সিটি কর্পরেশনের ৰমতা বৃদ্ধি এবং এ সংক্রানত্দ আইন সংস্কার করার প্রসত্দাব করা হবে। যেহেতু বর্তমান কেয়ারটেকার সরকার সংস্কারের পৰে, তাই তারা প্রসত্দাবগুলো বিবেচনায় আনবেন বলে মনে করি।

সূত্রঃhttp://www.jaijaidin.com/details.php?nid=10073

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান