সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন খালেদা জিয়া লন্ডন গেলেন সাঈদ এস্কান্দার

টিকিট লাগেজসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যাওয়া বাতিল করা হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ে তিনি তার সফর স্থগিত করেন বলে জানা গেছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ ৪৩৫ ফ্লাইটে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে তার সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল তার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো, পুত্রবধূ শরমিলা রহমান, নাতনী জাফিরা রহমান, জাহিয়া রহমান, তার সাবেক পিএস ভগ্নিপুত্র সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং গৃহপরিচারিকা রয়েছে। এর আগে সৌদি দূতাবাস তাকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় বলে দলীয় সূত্র দাবি করেছে। এরপর তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এদিকে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ এস্কান্দার সপরিবারে গতরাতে লন্ডন যাত্রা করেছেন। তিনিও সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন ব্যক্তিগত কাজে লন্ডন যাচ্ছেন।

প্রথমে গতকাল সোমবার বিকালে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসভবনে দেড়ঘন্টা সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র নজরুল ইসলাম খান এবং সহ-দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ইত্তেফাককে বলেন, চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন। দুশ্চিন্তা এবং নির্ঘুম থাকার ফলে তার ‘ওয়েট লস’ হয়েছে। স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশ খারাপ। আর আরাফাত রহমানের বুকের ব্যথা বেড়েছে। রবিবার রাতে একজন হার্ট বিশেষজ্ঞকে জরুরিভিত্তিতে বাসায় ডাকতে হয়। কিন্তু রাত পৌনে ৯টায় বিএনপি’র মুখপাত্র নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, চেয়ারপার্সন শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় আজকের ফ্লাইটে (গতকাল) সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন না। আরাফাত রহমান কোকোর শরীরও ভাল নয়।

নেতৃদ্বয় জানান, চেয়ারপার্সন তাদের বলেছেন, তিনি চিকিৎসার জন্যই যাচ্ছেন। চিকিৎসা শেষ হলেই আবার ফিরে আসবেন। এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বেগম জিয়া তাদের কাছে দলের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। নেতা-কর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই দুই নেতা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চেয়ারপার্সনের সঙ্গে কথা বলেন।

এদিকে জানা গেছে, গতকাল খালেদা জিয়া ২২ জুন দেশে প্রত্যাবর্তনের ফিরতি টিকেট নিয়েছিলেন। তার পারিবারিক একটি সূত্র জানায়, সকাল থেকেই যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। লাগেজ গোছানো হয়। তিনি মাত্র কয়েকদিন থাকার সাদামাটা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। বেগম জিয়ার বোনের পুত্র সাইফুল ইসলাম ডিউক রাতে তার বাবা-মাকে নিয়ে বারিধারায় মামা মেজর (অবঃ) সাঈদ এস্কান্দারের বাসায় যান। সেখানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বড় পুত্রবধূ ডাঃ জোবায়দা রহমান ঝুনু ও বড় নাতনী জায়মা রহমান সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন না। রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছোট ছেলে কোকোর গমনের বিষয়ে ওপর থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সমস্যা চলছিল বলে জানা যায়।

সাঈদ এস্কান্দার সস্ত্রীক লন্ডন গেছেন

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাই এবং বিএনপিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি মেজর (অবঃ) সাঈদ এস্কান্দার সস্ত্রীক গতকাল রাতে লন্ডন গেছেন। রাত সাড়ে ৯টায় এ্যামিরেটস-এর ফ্লাইটে দুবাই হয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। তিনি দু’সপ্তাহ পরে ঢাকায় ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। লন্ডনে তার সন্তানের কলেজের কনভোকেশনে যোগ দিবেন বলে জানান।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে

দুই ভাইয়ের সাক্ষাৎ

গতকাল রাতে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ভাই মেজর (অবঃ) সাঈদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দার দেখা করেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাঈদ এস্কান্দার ও সাড়ে ৭টায় শামীম এস্কান্দার সেনানিবাসের বাসায় দেখা করে কথা বলেন। সাঈদ এস্কান্দার প্রায় এক সপ্তাহ পর বোনের বাসায় গেলেন।

বিমান বন্দর এলাকায় কড়া নিরাপত্তা

গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে বিমান বন্দর অভ্যন্তরে নিরাপত্তাকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। প্রবেশগেট, ইমিগ্রেশন, এয়ারলাইন্সের টিকেট কাউন্টার ও ভিআইপি লাউঞ্জে এই ধরনের নিরাপত্তা ও নজরদারি রয়েছে। যাত্রী ব্যতীত কোন দর্শনার্থী বিমান বন্দর এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিমান বন্দরের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাত সাড়ে ৮টা থেকে বিমান বন্দর গোলচত্বরে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। এই স্থান থেকে দর্শনার্থীদের পুলিশ বিমান বন্দরে প্রবেশে বাধা দেয়। পাসপোর্ট ও বিমানের টিকেট দেখে কেবল যাত্রীদের পুলিশ ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়। দর্শনার্থীরা আজ মঙ্গলবার থেকে বিমান বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে বলে পুলিশ জানিয়ে দেয়। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত কোন ধরনের দর্শনার্থীকে বিমান বন্দরে প্রবেশ নিষিদ্ধ বলে পুলিশ অপেক্ষমাণ লোকজনদের জানিয়ে দেয়। সাঈদ এস্কান্দার ও তার স্ত্রী বিমান বন্দরে রাত সাড়ে ৮টায় গিয়েছেন।

গত চার মাস যেমন ছিলেন

খালেদা জিয়া

দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর গত ৯ এপ্রিল থেকে খালেদা জিয়ার ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের বাসভবনে যাতায়াতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি গৃহের বাইরে যেতে পারেননি। ২৬ এপ্রিল বেগম জিয়া তার ছোট ভাই মেজর (অবঃ) সাঈদ এস্কান্দারের বারিধারার বাসায় দাওয়াতে যাওয়ার অনুমতি পান। এরপর গত শুক্রবার রাতে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের বসুন্ধরার বাসায় নৈশভোজে যেতে দেয়া হয়। সেখানে তিনি সফররত দু’জন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে প্রায় তিন ঘন্টা বৈঠক করেন। গত ৫ মে সরকার দুটি পৃথক প্রেসনোটে বেগম খালেদা জিয়ার চলাচলে কোন বিধিনিষেধ নেই বলে জানিয়ে দেয়। ৯ মে বিবিসি ওয়ার্ল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, দুই নেত্রী মুক্ত নাগরিক। তাদের অবাধ চলাফেরায় কোন বাধা নেই। তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) হান্নান শাহসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ বলে আসছেন, বেগম জিয়া এখনো আগের মতই গৃহান্তরীণ আছেন। বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গত রবিবার হান্নান শাহ বলেন, সৌদি আরব ভিসা না দেয়ায় বেগম জিয়াকে সিঙ্গাপুর বা অন্য কোন দেশে চলে যেতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, বেগম জিয়ার বাসভবনের সকল টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে বাইরে থেকে নেতৃবৃন্দ তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেননি। ২৭ এপ্রিল মান্নান ভুঁইয়া দেখা করার সুযোগ পান বেগম জিয়ার সঙ্গে। পরেরদিন ২৮ এপ্রিল দেখা করেন সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমান ও ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। ২৯ এপ্রিল সাক্ষাৎ করেন ড. ওসমান ফারুক এবং ৩০ এপ্রিল এম কে আনোয়ার ও শামসুল ইসলাম। এরপর সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান ও সাবেক এমপি সুলতানা আহমেদ দেখা করেন। গতকাল বিকালে বিএনপি মুখপাত্র নজরুল ইসলাম খান ও সহ-দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসভবনে গিয়ে দেড় ঘন্টা বৈঠক করেন।

প্রসঙ্গত, ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর ব্যাপক ধর-পাকড় শুরু হয়। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বেগম জিয়ার বড় পুত্র তারেক রহমানকে ৭ মার্চ রাতে গ্রেফতার করা হয়। তার নামে এক কোটি টাকার একটি চাঁদাবাজি মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মাঝে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে।

Source:দৈনিক ইত্তেফাক
Date:2007-05-15

1 Responses to সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন খালেদা জিয়া লন্ডন গেলেন সাঈদ এস্কান্দার

  1. […] is filed under জাতীয় খবর. You can follow any responses to this entry through the RSS 2.0 feed. You can leave a response, or trackback from your own […]

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান