তালিকা আগে হলে আগে ভোট

সিইসি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন করার জন্যই আমরা সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সেটা করতে যেভাবেই হোক দুই মাসের মধ্যে পরামর্শক দলকে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদেরকে এ জন্য রাতদিন কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, পরামর্শকদের সঙ্গে আমরা ভোটার তালিকার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করেছি। তবে দুই সপ্তাহের মধ্যে জানা যাবে, ভোটার তালিকা করতে কী কী যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে। তাই এর আগে প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে আলাপ করে খুব একটা লাভ নেই। তিনি আরো বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র বাদ দিয়ে আমরা আপাততো শুধু ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার ওপরই বেশি গুর”ত্ব দেওয়ার জন্যই পরামর্শকদের বলেছি। এই প্রক্রিয়া মধ্যে আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেই পাইলট প্রজেক্টের কাজও শুর” হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, যখন আমরা ঘোষণা করলাম ১৮ মাস সময়ের কথা, তখন কিন’ আমরা বলিনি কখন থেকে শুর” হবে। অনেকে এ নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন, টাইম লাইনটি কী? আমাদের কথা হচ্ছে, আজ (গতকাল ৩০ এপ্রিল) থেকে ১৮ মাসের কাউন্ট ডাউন শুর” হলো।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশী-বিদেশী ৫ জন পরামর্শক আজ থেকেই কাজ শুর” করলেন। ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ কীভাবে শুর” করা যেতে পারে সে ব্যাপারে দুমাসের মধ্যেই পরামর্শকরা তাদের পরামর্শ দেবেন। ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির কাজে ১৮ মাসের গণনা আজ শুর” হলে সেই কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে গিয়ে।
২০০৮ সালের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা যে সময়টার কথা বলেছেন, তা আমাদের আউটার লিমিট। বলা যায় না, তার আগেওতো আমরা করতে পারি।
সিইসি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ২০০৮- এর মধ্যে (নির্বাচনের কথা)। উনি তো বলেন নাই ২০০৮- এর ডিসেম্বরের মধ্যে। আমরা ২০০৮ -এর আগস্টের মধ্যেও নির্বাচন করতে পারি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগে হয়তো মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ইলেকশন দিতে পারি, আমরা যদি রেডি থাকি। তিনি আরো জানান, নির্বাচন কমিশন পরামর্শকদের পরামর্শ অনুযায়ী এখন অল্প সময়ের মধ্যেই একটি শহর ও একটি গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুর” করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বিভিন্ন দেশে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। আমরাও এর পক্ষে নই। তবে শুধু ছাত্ররাজনীতি কেন, লেজুড়বৃত্তির যে কোনো রাজনীতিই দেশের জন্য ভয়ানক। এক্ষেত্রে লেজুড়বৃত্তির দিকটি যাতে বন্ধ করা যায় সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের সময় বিষয়টি উল্লেখ রাখার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান সিইসি।
সূত্র জানায়, পরামর্শক দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক স্টিভ কেনহাম। অন্য বিদেশী পরামর্শক সুইডিশ নাগরিক পিটার দেখবেন নেটওয়ার্ক এন্ড সিকিউরিটির দিকটি। অন্যদিকে দেশী দুই পরামর্শক দেখবেন ই-গভর্ননেন্স ও ডাটাবেজের কাজ। ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির পরিচালক প্রফেসর এম এম লুৎফুল কবীর ই-গভর্ননেন্স এবং এআর আজিজুল হক রায়হান দেখবেন ডাটাবেজ। পঞ্চম পরামর্শক হিসেবে খুব তাড়াতাড়িই আরো একজন এই দলে যোগ দেবেন। তাছাড়া পরামর্শক দলের কাজ তত্ত্বাবধান করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ইআরডির সমন্বয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। এরাই পরামর্শক দলের কাজ তত্ত্বাবধান করবে।
এদিকে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির সমন্বিত প্রকল্প প্রণয়নের কাজের পরামর্শকরা গতকাল সকালে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে দেখা করে তাদের কাজ শুর” করার বিষয়টি চূড়ান্ত করেন। দুজন দেশী ও দুজন বিদেশীসহ চার পরামর্শক দল কমিশনারদের সঙ্গে দেখা করলে এ বিষয়ে কমিশনের ভাবনা এবং পরামর্শকদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রেনটা লক ডেসালিয়ন উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎ শেষে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী সাংবাদিকদের বলেন, হাইকেট পদ্ধতির ভোটার তালিকা দেশে এবারই প্রথম হতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথম দুই মাসের মধ্যেই একটি প্রজেক্ট প্রফাইল তৈরি করা হবে এবং সে অনুসারে সরঞ্জামাদি কেনা হবে। আজ ছুটির দিনেও পরামর্শকরা তাদের কাজ করবেন বলে তিনি জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় শিশু টাস্কফোর্সের স্মারকলিপি
গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জাতীয় শিশু টাস্কফোর্সের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের অনুরোধ করে একটি স্মারকলিপি দেয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার সমপ্রতি খুব বেড়ে গেছে। এর ফলে রাজনৈতিক দল এবং একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা উভয়ের দ্বারা নানা অজুহাতে শিশুদের ওপর নির্যাতনের হার বেড়ে গেছে। এ থেকে প্রতিকারের জন্য জাতীয় শিশু টাস্কফোর্সের ব্যানারে সেফ দ্য চিলড্রেন এবং প্রাণ বাংলাদেশ নামে দুটি সংগঠনের দশ জন শিশু সিইসির কাছে আবেদন জানায়।
সিইসি বিষয়টিকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে শিশু নেতৃবৃন্দ্বকে বলেন, নীতিমালা প্রণয়নের সময় বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখা হবে। তাছাড়া তিনি শিশুদের এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরামর্শ দেন। Source:ভোরের কাগজ
Date:2007-05-01

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান